পর্ণমোচী
/ বুদ্ধদেব গুহ
জীবনকে
জীবনের সাথে প্রকৃতির হাত ধরে কিভাবে মেলাতে হয় তা কেবল অসামান্য জীবনশৈলীর কথা
চিত্রকর বুদ্ধদেব গুহ-র পক্ষেই সম্ভব । ‘কোজাগর’ , ‘মাধুকরী’ , ‘সবিনয় নিবেদন’
ইত্যাদি উপন্যাস এবং ‘ঋজুদা’কে নিয়ে লেখা মুগ্ধ হয়ে পড়েছি ।সবে শেষ
করলাম ‘পর্ণমোচী’ । পাতার মত বয়সের ভারকে কিশলয় যেন ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে
ঝরিয়ে দিতে চাইছে । ফোন ইন্টারনেটের যুগেও কিভাবে এক জীবন অন্য আত্মিক জীবন থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অথবা করে ফেলা হয় তারই এক জ্বলন্ত দলিল । একটু তুলে ধরা যাক – “এই
কম্প্যুটার-সর্বস্ব যুগে আমরা বয়স্করা বড় বেমানান হয়ে গেছি । আমাদের এবারে চলে
যাওয়াই ভাল । আমার পুত্র আমাকে একটি কম্প্যুটার কিনে দেবে বলেছিল । বলেছিল,তাতে
কম্যুনিকেশনের সুবিধা হবে । এক লহমার মধ্যে কথাবার্তা চালাচালি করা যাবে । আমি
মানা করেছি । বলার মতো কোন কথা না থাকলে তা মিথ্যে চালাচালি করার প্রয়োজনই বা কি
।”প্রতি
ছত্রে এ ভাবে বিচ্ছিন্ন জীবনের ঝরে পড়ার কথা আছে । যা বাস্তব । আর একটা কথা না
বললেই নয় যে কয়েকটা চিঠিই একটা আস্ত জীবন । কত সুন্দর ভাবে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে অসামান্য
মুন্সিয়ানার সঙ্গে লেখা হয়েছে । পড়া শেষ করার পর নিজের সঙ্গে নিজেকে দাঁড়াতেই হয় । শুধু পাতা নয় বয়সের ভার
কিভাবে হলুদ হয়ে যায় আর আধুনিক প্রজন্ম সবুজ থাকার ছলে কতটা বেসামাল তাই লিপিবদ্ধ
।
দিগন্ত ,
ইন্দি সেন , প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় , দিশারী , ভ্রমর এই গুটিকতক চরিত্র । তাদের
চিঠি আদান প্রদান আর জীবনের কাছে বার বার ফিরে ফিরে এসেও ঝরে পড়ার আখ্যান ।বুদ্ধদেব
গুহ-র লেখা পড়ার আর একটি বৈশিষ্ট্য হল বেশ তথ্য সম্পর্কে যথেষ্ট পরিচিত হওয়া যায় ।
যেমন ঋষি উদ্দালকের পুত্র শ্বেতকেতু বিবাহ প্রথার পত্তন করার পরে কামশাস্ত্র রচনা
করেছিলেন । তার একটি অধ্যায় ‘পরদারাধিকরণস্য’ ( পরস্ত্রী ফুসলানোর উপায় ) । এবং তার সুফল কুফল ; ‘মারেফাত গান ‘ কি ; বিভিন্ন পাখি গাছপালা এবং
দেশ বিদেশ ও তাদের কালচার জানা যাবে । আর মনোরম লামনি আর আচানকমারের বাংলো
সম্বন্ধে না বললেই নয় । রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আধুনিক সাহিত্যিক কবিও কিভাবে
যেন জীবনে জড়িয়ে তাও মনে ছাপ ফেলে যায় ।
কম্প্যুটার
মোবাইলের ব্যবহারে কতটা হৃদয় বিচ্ছিন্ন তা সুন্দরভাবে এই ‘পর্ণমোচী’ বার বার দেখতে
পাই ।আর যেন
কেউ বয়সের ভারে হারিয়ে না যায় তারই কৈফিয়তে সুখপাঠ্য ‘পর্ণমোচী’ । কষ্ট করে ক’পাতা
পড়ে ফেলতে পারলে শেষ করতেই হবে ।
valo laglo pore. uponyas ti porar agroho jonmalo sighroi.
উত্তরমুছুন