প্রসঙ্গঃ ‘রাতে পড়বেন না’ (প্রচেত গুপ্ত)
তবু রাতেই পড়লাম। সবকটা গল্পই রাতে পড়লাম। দিনে সময় থাকলেও অন্য বই পড়ে নিতাম। কিন্তু এই বইটা খুলতাম না। প্রচেত গুপ্তও জানতেন বইয়ের নাম ‘রাতে পড়বেন না’ দেখে সবাই রাতেই পড়বে। সেজন্যই বোধ হয় গল্প সংকলনটার নাম দিয়েছেন শেষ গল্পটার নামে। আর মলাটখানাও এমন যে কেনার সাথে সাথেই গা-ছমছমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে দেবে। আমি তো বইটা ব্যাগে পুরে মিত্র ও ঘোষের স্টল থেকে বেরিয়ে ভেবেছিলাম, আস্ত একটা ভূত ঢুকিয়ে দিয়েছি ব্যাগে। বাড়ি এসে ধারণা বদ্ধমূল হল, যখন দেখলাম ভূমিকাতেও প্রচেতবাবু ভূতের গল্প লেখার অভিজ্ঞতার কথাই বলেছেন।
কিন্তু গল্পগুলো পড়তে গিয়ে সেই পাগলা দাশুর বাক্স খোলার মত অবস্থা। আরে, ভূত কই???? ‘দেশ’ রেগুলার রাখার সুবাদে ‘ফিসিফিস’, ‘পরদা’ তো আগেই পড়েছি, এখন দেখছি বাকি গল্পগুলোও কম-বেশি সেরকমই। প্যারানর্মাল অ্যাক্টিভিটি নিয়ে শুরু হচ্ছে, কিন্তু গিয়ে শেষ হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক উপসংহারে। হ্যাঁ, ভূত যে একেবারে নেই তা নয়। কিন্তু ‘গঙ্গা কোথায়’ ছাড়া প্রত্যেকটা ভূতের গল্পই প্রশ্নচিহ্ন রেখে দেয়, আসলে ভূত না হ্যালুসিনেশন? ...আর তখনই বইয়ের নাম এরকম রাখার যথার্থ কারণ পাওয়া যায়। রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক কাহিনী পড়া এবং তার বিশ্লেষণ করা দুটোর জন্যই আমাদের মাথা ভালো খোলে। মনোবিশ্লেষকদের সেরকমই ধারণা। সুতরাং, যাকে আমরা ভৌতিক পড়ে থ্রিল অনুভব করার উৎস বলে ভেবেছি, সেটা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক অলিগলিতে নিপুণভাবে আঁচড় কেটে যাবে। এবং হ্যাঁ, তার সাথে থ্রিলও রয়েছে, রয়েছে কমেডির সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কাজ। রয়েছে রূপক, কোথাও কোথাও দুর্দান্ত স্যাটায়ার। সবমিলিয়ে দিনে পড়ার চেয়ে রাতেই পড়ার বই। আর এত কিছুর কোলাজ বলেই বলছি, এই বই হাতে পেলে গোগ্রাসে গিলে খাওয়া যায় না, চিবিয়ে চিবিয়ে হজম করতে হয় ।
আমার জানা নেই ছোট ছোট গল্পের মধ্যে দিয়ে মনস্তত্ত্বের এত সূচারু বিশ্লেষণ এর আগে কেউ করেছেন কিনা। প্রচেত গুপ্ত এমন সব না জানা জায়গায় আলো ফেলেছেন, যার কথা বাইরের অনেক দেশে বহুল পরিচিত হলেও আমাদের এখানে অনেক ‘বিদ্বজ্জন’ও জানেন না। যেমন ধরলাম, প্রথম গল্পেই (‘অনুসরণকারী’) স্প্লিট পার্সোনালিটি। রোগটা কিন্তু খুব কমন। তবু আমাদের এখানে অনেকে জানে না। সমাজের এই না-জানার ফল সুদুরপ্রসারী। এতে এই রোগের রুগীদেরও আরোগ্যলাভের রাস্তায় ছেদ পড়ে যায়। নিজেকে দ্বৈত সত্তায় বিভাজিত অবস্থায় দেখছেন, এমন মানুষ কিছু চারদিকে হামেশাই আছেন। সবার অবস্থা বা আনুপূর্বিক ঘটনা গল্পের ‘খোচর’এর মত নয়, কিন্তু অনেকের মধ্যেই এটা আছে। অথচ এমন মানুষের সন্ধান পেলে সবাই পাগল ঠাওরাবে। কিংবা ‘লোকটা’ গল্পের স্বামীসর্বস্ব গৃহবধুর মত ‘ক্যাপগ্রাস ডিলিউশন’ হতে দেখলেও তা-ই বলবে। এই রোগ অপেক্ষাকৃত কম হলেও কিছু মানুষের মধ্যে আছে। আসলে, মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান এতই কম যে, যে কোনো সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার দেখলেই আমরা সংক্ষেপে উপসংহার সারি, “মালটা পাগল”। সেদিক থেকে, ‘রাতে পড়বেন না’ গল্পগ্রন্থকে সচেতনতামূলক বইও বলা যায়। প্রচেত গুপ্তর প্রাঞ্জল ভাষা, অসাধারণ ঘটনাবিন্যাস নিয়ে আমার পক্ষে কিচ্ছু বলা সম্ভব না। পাঠক আঠার মত বইয়ের সাথে সেঁটে থাকতে বাধ্য। আমি শুধুমাত্র গল্পের অন্তরীণ অর্থ আর গল্পের ভিতর সমাজ প্রতিফলন নিয়ে সামান্য দু-চার কথা বলব।
সাইকোলজিক্যাল কথাতেই থাকি। প্রচেত গুপ্ত অনেক গল্পেই কমবেশি প্রশ্ন রেখে দিয়েছেন, আসলে কী হল? গল্পকে যে নানা দিক থেকে ব্যখ্যা করা যায়, সে তো স্পষ্টই। এখন প্রশ্ন হল, নানাদিকের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দিক কতটা? খুঁটিয়ে পড়লে বোঝা যাবে, প্রত্যেক গল্পেই কমবেশি। ‘ফিসফিস’এর আপাত অর্থ অডিও হ্যালুসিনেশন হলেও ভেতরে রয়েছে একজন ভীতু, মেরুদণ্ডহীন মানুষের ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স। ‘পশুপতির দুই বঊ’ আপাতভাবে ভৌতিক গল্প হলেও পরোক্ষে যেন মনে হয়, প্রত্যেকটা মানুষের অবচেতনের ভয় বাইরের সাহসী সত্তাকে ব্যঙ্গ করে চলে গেল। শেষ দৃশ্যটা ভেবে দেখুন, ‘সাহসী’ বউয়ের ভয় পাওয়ার কথা কেউ জানতেও পারল না, জানল শুধু ‘ভীতু’ বউটার আত্মা। ‘পরদা’তে সমান্তরালভাবে এগিয়েছে দুটো মনস্তত্ত্ব। একজন মহিলার বারবার মা হতে গিয়ে সন্তানহারা হওয়ার যন্ত্রণা আর অনেকদিন সঙ্গম থেকে তাঁর শরীর বঞ্চিত থাকার হতাশা, সেই সাথে একজন পুরুষের ফিয়ার কমপ্লেক্স - এই গল্প না পড়লে বোঝাই যেত না সবগুলোকে এক জায়গায় আনা যায়। তবে রূপকের ব্যবহার সবথেকে বেশি করেছেন ‘গোলমেলে গল্প’তে। তিনটে আলাদা সময়ে ফোনের ব্যবহারের অন্তরালে মানুষের জীবনে তিন স্টেজে প্রেমের আলাদা আলাদা অভিব্যক্তি কৌশলে লেখক ঢুকিয়ে দিয়েছেন। যে অংশটা সময়ের থেকে লেখক এগিয়ে নিয়ে গেছেন, সেটা আসলে অনেকদিন ধরে দাম্পত্য জীবন কাটানোর পর। যে অংশটা লেখক এই সময়ের প্রেক্ষিতে এনে ফেলেছেন, সেটা সবে চাকরি পাওয়া ছেলেমেয়েদের অনভ্যস্ত কর্মব্যস্ততার মাঝে প্রেমের অবসর। আর যে অংশটা অনেক আগে হয়ে গেছে, সেটা স্কুলজীবনের সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ। কী, এমনটা ভাবলেই প্রত্যেকটা কথা খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে না?
কোনো সংকলন-গ্রন্থ আলোচনাতেই আমি চিরাচতির প্রথা মেনে চ্যাপ্টার ধরে ধরে এগোই না। এক্ষেত্রেও সেটাই করছি। তাছাড়া প্রচেত গুপ্তর বহুমাত্রিক গল্পগুলো তো আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রার আনাচে কানাচে ছড়ানো। ‘ফুলের তোড়া’ই হোক আর ‘আধেক দুয়ার খোলা’, অত্যন্ত সাধারণ মানুষদের ভীষণ পরিচিত এক একটা ঘটনার ভিতর থেকেই প্রচেত গুপ্ত গল্পের প্লট তৈরী করেছেন। আদ্যোপান্ত কমেডির গল্প ‘পেরেক’এর ফাঁকে ফাঁকেও রাজ্যের অফিস-কাছারির বাস্তব চিত্র, শান্ত নির্বিবাদী বাবার উপর ছেলে-মেয়ের মেজাজ – সবকিছু সুন্দরভাবে গুঁজে দেওয়া। দৈনন্দিন চালচিত্রের এমন এক একটা অংশকে রম্যরচনার ছাঁচে ফেলেছেন, যা আমরা রোজ দেখি বা করে থাকি কিন্তু তার থেকে যে এমন কিছু বানানো যেতে পারে তেমনটা আমাদের ধারণার বাইরে। শুধু রম্যরচনাই নয়, ‘হানিমুন’ গল্পে সামাজিক বিয়ের বর্বরতাকে চরমভাবে লেখক ব্যঙ্গ করেছেন। গল্পের শেষে উত্তরবঙ্গের ভূতুড়ে অভিজ্ঞতাটা গল্পকে আতিপ্রাকৃতর দিকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু শেষ লাইন অবধি লেখক সেই ব্যঞ্জনাটাই দিয়ে গেছে, যাকে একজন চেনে না জানে না তাকে শুধুমাত্র মোটা খামের চাকরির কারণে বিয়ে করে ফেলা – ভবিষ্যতে অনেক সর্বনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সমাজ ও মনস্তত্ত্বের অসাধারণ মিশেল তৈরী হয়েছে ‘পাশে আছি’ গল্পে। লেখক দেখিয়েছেন, শোরগোল তোলা প্রতিবাদগুলো বাস্তবিক অন্তঃসারশূন্যই হয়। আবার, শহরে চিকিৎসা করাতে এসে অনভিজ্ঞ গ্রামের মানুষদের চরম ভোগান্তি – সব যুগেই ছিল, এখনো আছে। অথচ তাই নিয়ে কারোর উচ্চবাচ্য নেই। ‘চিরুনি’ গল্পেও সমাজ প্রত্যায়িত ‘অপরাধ’ আর অবচেতনের ‘অপরাধ’ দুটো দিকই দুর্দান্তভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, রাজনৈতিক হোক কি সমাজের ‘এলিট’ ক্লাসের মানুষ হোক, ‘মনস্তত্ত্ব’ বিষয়টা সম্বন্ধে ধারণা খুব কম মানুষেরই আছে। আর সমাজবিজ্ঞান সম্বন্ধে যা ধারণা আছে, বেশিরভাগই মনগড়া। এ দুটো একটু সূচারুভাবে থাকলে হয়তো প্রচেতবাবু যে সমস্যাগুলো দেখিয়েছেন, সেগুলোকে আলাদা করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর কোনো দরকার হত না।
আর একটা ব্যাপারেও প্রচেতবাবু নতুনত্বের ছাপ রেখেছেন। গল্পের মোড় পরিবর্তন। ‘মশারি’ গল্পটা যেমনভাবে কমেডি দিয়ে শুরু হল, কেউ ভাবতেও পারবে না যে, শেষে গিয়ে ভৌতিক চেহারা নেবে। আর সেটাও হঠাৎ করে। এর ঠিক বিপরীতটা দেখা যায় ‘একটা দিন’ গল্পে। সাসপেন্সের শিরশিরানি পরিণত হল মিষ্টি নস্ট্যালজিয়ায়। একটা সুখস্মৃতি কে ফিরিয়ে দেবে, কীভাবে ফিরিয়ে দেবে, আদৌ সে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিনা সব ধোঁয়াশাই থেকে গেল। অথচ গল্প শেষ হল চমৎকার এক পশলা আনন্দ দিয়ে। থ্রিলার মানেই আদ্যোপান্ত থ্রিলার, তাতে বিদেহী আত্মার প্রবেশ ঘটলে প্রথম থেকেই অতিপ্রাকৃত ঘটনাক্রম – এরকম একপেশে গল্পের ধারণা অনেক দেশেই পাল্টে গেছে। স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানিতে নব্বই দশক থেকে এরকম সিনেমাও অনেক বেরিয়েছে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে ঘরানাভিত্তিক গল্পের আবরণ ছেড়ে এরকম মোড় ঘোরানোর ধারা কিন্তু তেমন চোখে পড়ে নি। থাকলেও জনপ্রিয় গল্পে অন্তত নেই। সেদিক থেকে প্রচেত গুপ্ত নতুন পরীক্ষা করেছেন বলা যায়। গল্পের চরিত্রের মধ্যেও এমন পরিবর্তন এনেছেন। এগুলোকে ঠিক ‘পরিবর্তন’ বলা যায় না, বরং এই বার্তাটাই লেখক বোধ হয় দিতে চেয়েছেন যে, প্রত্যেকটা মানুষের যে চেহারাটা দৃষ্টিগোচর হয়, তার আড়ালে অন্য মানসিকতা থাকে। অনেক সময় অন্য ক্ষমতাও থাকে। সময়মত তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘চিরুনি’, ‘ফিসফিস’, ‘চৌর্যশৌর্য’ প্রত্যেকটা গল্পের মধ্যেই এমন চরিত্র পাবেন।
শুধু একটা প্রশ্ন থেকে গেল। প্রশ্ন ঠিক বলা যায় না, সামান্য একটা কৌতূহল। ‘চিরুনি’ হোক, কি ‘লোকটা’, প্রচেত গুপ্ত সমস্যাগুলো দেখিয়েছেন সাইকোলজিক্যাল, কিন্তু তার নিস্তারের জন্য গল্পের চরিত্রদের পাঠিয়েছেন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে। ‘পরদা’তেও দেখা যাচ্ছে একজন সঙ্গম অনিচ্ছুককে তাঁর স্ত্রী ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিচ্ছে, মনোবিদ নয়। ....এখন একটা ব্যাপার পরিষ্কার করি, যা রোগ নয়, কথার মলমে যার ঘা সারে, সেগুলোর জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের থেকেও সাইকোলজিস্টরাই বেশি সিদ্ধহস্ত ও কার্যকরী। দুই পেশার মধ্যে তফাত খুব সামান্যই। কিন্তু বর্তমানে যেটা হচ্ছে, ‘কাউন্সেলিং’এর জন্য, বিশেষ করে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কাউন্সেলিং-এর জন্য সাইকিয়াট্রিস্টরা আর সময় দিচ্ছেন না, রোগীকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সাইকোলজিস্টের কাছে। যন্ত্রনির্ভর লাইফস্টাইলে আর প্রতিযোগিতার যুগে নিউরোলজিক্যাল সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় বিচিত্র ধরনের রুগী দেখে তাদের জন্য নার্ভ স্টেবিলাইজার, মেমব্রেন স্টেবিলাইজার প্রেসক্রাইব করতে করতেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ চিকিৎসকদের সময় চলে যাচ্ছে। তাই ‘কাউন্সেলিং’এর সময়টা আস্তে আস্তে তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রচেতবাবু যে সমস্যাগুলো দেখিয়েছেন, সেগুলোতে। আর এগুলোর ক্ষেত্রে মনোবিশ্লেষকরা সাধারণত ‘থট রিডিং’এর কাজটা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের চেয়ে ভালো করেন। তাই, ‘মনোবিশ্লেষক’ প্রফেশনটাকে একটু হাইলাইট করলেই কি ভালো হত না?
সবশেষে বলি, মনস্তাত্ত্বিক আখ্যান লিখতে গেলে তাতে পাঠককে শেষ পাতা অবধি বসিয়ে রাখার জন্য অনেক চিত্তাকর্ষক উপাদান রাখতে হবে – এটা সবার শেখার আছে প্রচেত গুপ্তর প্রত্যেকটা লেখা থেকে। আশা করব, এই রাস্তায় হেঁটে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে এই ধরনের লেখা আরো আসবে।
(কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ ছয় নম্বর অনুচ্ছেদের শেষটা পড়ে দেখুন। তারপর চলে যান চার নম্বর অনুচ্ছেদের শেষে।
বলেছিলাম না, আপাত চেহারার আড়ালে অনেক লুকোনো ক্ষমতা থাকে? ঠিক তেমনই ‘গোলমেলে গল্প’এর ‘খাপে-খাপে-মিলে-যাওয়া’ ব্যাখ্যাটা দিয়েছে আমার এক অ-লেখক ভাই, যার গল্প-উপন্যাস প্রায় পড়া নেই বললেই চলে। কোনো সাহিত্য আলোচনাও শোনে না। নাম, নীলেশ দাস। ওকে জোর করে এই বইটা ধরিয়েছিলাম, এখন প্রচেত গুপ্তর ভক্ত হয়ে গেছে। আমি প্রথমে গল্পটার অন্য একটা ব্যাখ্যা ভেবেছিলাম, কিন্তু নীলেশের ভাবনাচিন্তা শোনার পর ভেবে দেখলাম, এর থেকে ‘অবভিয়াস’ মর্মার্থ থাকা সম্ভব নয়।তাহলে দেখলেন তো, প্রচেত গুপ্তর বানানো চরিত্ররা কিন্তু বাস্তবানুগ। এর পরে যদি দেখেন কোনো বাথরুম সিঙ্গার হেভিওয়েট খেয়াল কিংবা হার্ড রক শুনে মিনমিন করে বলছে, ‘ঠিক ভাল্লাগছে না’, তাহলে তাকে তেড়েমেড়ে ত্যারাব্যাঁকা বাক্যে বিদ্ধ করতে বসবেন না। বলবেন না, ‘তুই এসবের কী জানিস রে? আগে ডিম পেড়ে দেখা, তারপর এগ কাটলেটের নিন্দা করবি’.... আনাড়ির মতকেও সম্মান করুন। প্রচেত গুপ্ত আপনাদের এই স্বভাবকে অনেক গল্পেই কটাক্ষ করেছেন। তেমনি যেসব বাথরুম সিঙ্গার ‘আমার ভাল্লাগছে না’র সীমা ছাড়িয়ে ডিসেকশন করতে বসে, তাদেরও মোক্ষম এক হাত নিয়েছেন অনেক জায়গায়।
ভদ্রলোকের সব গল্প, উপন্যাস রাতেই পড়তে থাকুন। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মধ্যে মাথা খাটিয়ে বুঝে বুঝে পড়ুন, টিপিক্যাল বাঙালী মতাদর্শকে অনেক জায়গায় ল্যাং খেতে দেখবেন। আর সেই রামচাটানি খেয়ে খেয়ে, বলা যায় না, একদিন হয়তো আমার আপনার স্বভাব বদলাতেও পারে।)
জম্পেশ লেখা । প্রচেতের বইটি তাহলে রাতেই পড়তে হবে । তাই তো?
উত্তরমুছুনkhub e chomotkar review. prachet gupta amar priyo ekjon lekhok hobar subade onar besh kichu lekha ami porechi. ei boita akhono pore otha hoyni. kintu golpo gulor koekta nam sune mone holo age porechi. monobishleshok r monorog biseshogyor farak ta amon vabe byakhya na korle amio dhorte partam na.
উত্তরমুছুন