১৪ অক্টোবর ২০১৪

গল্প-অভ্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়



আমিতা, আমিতারার ছোটোবেলার গল্প
অভ্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়

 ছোটোবেলায় আমরা ঘামতাম না, ঘামলেও চ্যাটচ্যাট করত না গা, করলেও টের পেতাম না সেসব, পেলেও পাত্তা দিতাম না, দিলেও তারা ছিল গন্ধহীন, তাই সাবানসেন্টপাউডার ছাড়াই আমি আর মিতা ডালপালাশিকড়বাকড়ফুলপাতায় ফিসফাস লুকোচুরি খেলতাম আমিতা হয়ে, একদমে পার হতাম ত্যক্ত পুকুর সাথে সাথে পাঁচমনি কাতলাদুটো আম্পায়ারিং করত, শ্যাওলা পিছলোলে পায়ে পায়ে গুঁড়ি মারত জলজ আগাছা, তাদের যত্নে শোওয়া মেজোপিসির হাড়গোড় ক্যালসিয়াম আর শেষ সম্বল সীতেহারখানি, ঘষা ঘষা সাদাকালো ফোটোগ্রাফটার মতোই দড়ি-কলসির খবর কেউ নেয় নি যদিও

চলতে ফিরতে গল্পের খাতিরেও মিতার গা থেকে পেতাম না চুমু খাওয়ার ইচ্ছেলাগা ঘ্রাণ, কারণ সে অনেক ছোটোবেলা, অনেক হাজার বছর আগের নোনতা গরম, কখনো স্বামীস্ত্রী ভাইবোন বাবামেয়ে মাছেলে কখনো মাহুতহাতি রাণীবিদূষক চাকরদোকানি যাত্রীচালক কখনো বকুলফুল বেলকুঁড়ি পদ্মপাতা গঙ্গাজল কখনো পেরেহাতুড়ি রিফিলপেন আংটিআঙুল গোলাপকাঁটা, হতে হতে সাজতে সাজতে বলতে বলতে ভাবতে ভাবতে, জিরোনোর দিনে সেই ভাত পাশে পালং শাকের তে-এঁটো হাসি, তবুও মিতা দলা দলা মাখে নিজের গরাস আমার গরাস ছন্দের মতো হারমোনি মেনে, ওর জন্য কামরাঙা রাখা বৃক্ষশাখা গর্ভবতী

আসলে তখন তো সব খেলনাবাটি বাবার হাতে টিনটিন আর অন্য হাতে চড়চাপাটি, আসলে তখন তো সব প্রথমদেখা মায়ের হাতে বেগুনভাজা অন্য হাতে খড়ির রেখা, আমরা হয়তো এখন ভাবছি কে যায় স্কুলে পড়তে বসা উঠুক লাটে, পরক্ষণেই ক্রিকেট ব্যাটে শানুর পাশে ছুটছি মাঠে, মিতার সঙ্গে বন্য ডুমুর অঙ্ক কষা অন্য চুমু রবার ঘষা

যাহোক আমরা কিন্তু প্রবল ভিজেও ঘাম মুছতাম অন্য ঘেমো হাতে, হিসেব খাতায় জমত সবই, খরচ কোথায়, বাবার পকেট মা দুহাতে রান্নার সাথে কান্নার ছাপ অন্ত্যমিলে থাকত লেগে, বাবা ভাবতেন আর টা দিন তারপরেই তো এলডোরাডো, তা অবশ্যি সবাই ভাবে, মা ভাবতেন আর কতদিন আকাশ ঝেঁপে শ্রাবণ-ভাদর টুপটুপাবে, তা অবশ্যি সবাই ভাবে, আমরা কিন্তু ভাবতাম না, জানতাম যে সবি, মিতার সাথেই গোরুর গাড়ি মিতার সাথেই ইঞ্জিন ট্রেন, ওর সাথেই রকেট চাপব পরের শতাব্দীতে, তখনো সবাই আমিতা, তখনো সবার চুমুর আগে টুথব্রাশ লাগে না, শুধু সন্ধে হলেই সবাই মিলে গোলাপী চাঁদের নরম আলোয় বসে, ওদের গল্পে সঙ্গী হতে তিনটে তারা খসে, মরার আগে না

২টি মন্তব্য: