১৪ অক্টোবর ২০১৪

কবিতা-জয়ন্ত দেবব্রত চৌধুরী

তুমি বিনা 
জয়ন্ত দেবব্রত চৌধুরী
 
একান্ত আয়নায় তোমার মুখ দেখে চমকে উঠে থমকে পড়ি কখনো; লতানে   ভালোবাসা আমার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে মাটির দু’ফুট ওপরে উঠেই শুকিয়ে যায় ধীরে ধীরে। ছাতে উঠে, মাতাল আমি, চুপচাপ সিগারেট টানি; দ্বিতীয়ার চাঁদ নাবতে নাবতে কাছে এলে ঝাপসাচোখে দেখি তোমার মুখেও তো অনেক জন্মদাগ, কিছু পাপপুষ্ট। সিকিমে এসে নিরালা খুঁজে চুপে ডাক দিই, অর্ধাবনত লজ্জায়, ফিসফিসগুলো উত্তর খোঁজে, ‘সুরঞ্জনা, তুমি কোথায়?’ প্রতিধ্বনিগুলো পাহাড়ে-পাহাড়ে, শৃঙ্গে-শৃঙ্গে, বরফে-বরফে অসফল ধাক্কা খেতে খেতে একঘেয়ে বলে যায়, ‘এখানেএখানে….এইতো এখানে’। অন্ধরাতের আনাচেকানাচে অনেক তোমাকে চিনতে পেরে জাপটে ধরতে যাই, ‘এখানে নয় কিন্তু, হোটেলে…. প্রত্যুত্তরে পালাবার সময় বরাবরই লোডশেডিং আর চিলচিৎকার। বাধ্য হয়ে আমি চিল মেরেছি গুলতি দিয়ে, ব্যবচ্ছেদের স্বরযন্ত্র শুধুই রক্তমাখা পিঁপড়ের টোপ হয়েছে, তা থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত আশা করেছিলাম বলে স্বধিক্কারে দৌড়ে পালিয়ে ফিরেছি। আমার ঠোঁটের ফাটলে জমানো তোমার সতেরোটা চুম্বন পাতনপ্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ বুনট বানিয়ে বাটিতে রেখেছিলাম, ঘরে মেঠো ইঁদুরের উদ্ভট উৎপাত হওয়ায় তাই দিয়েছি খেতে, কাল স্নানঘরের নালির ফুটোয় চোখ পেতে দেখি ওটা বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায় ফুসফুসে জমানো দীর্ঘশ্বাসগুলো ছাড়ছে পরপর। গলিপথে সেকেলে সাইকেলের শব্দভেদী সাইরেন শুধু সিকিমগুম্ফার স্বরধ্বনিই স্মরণ করায় যেখানে অপৌত্তলিক আমি, কোনো দেবতা নয়, ঘণ্টামাত্র সাক্ষী রেখে গন্ধর্বমতে বলেছিলাম, ‘আজ থেকে তুমি আমার ব্যাক্তিগত নদী’যখন কালাপানি না ছুঁয়েও, ওপর দিয়ে উড়ে, অশুচিস্পর্শা তুমি শনিবারে সিয়াটলে ছেলেবন্ধুদের সাথে মধ্যবিত্ত মার্কেটিংরত; তখন কলকাতায় ছুঁচোর ঘামে অতিষ্ঠ আত্মহত্যাকামী স্বহত্যাস্পর্ধী আমি চিন্তান্বিত যে শুধু নিজেরই নয়, উপহারে প্রাপ্ত কোটি কোটি নিষ্পাপ ও কুটিল প্রাণ বধিব কীরূপে?
                                            

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন