১৪ অক্টোবর ২০১৪

গল্প-চিরদীপ সরকার



হাউই
চিরদীপ সরকার


আজ দীপাবলি। এল..ডি দিয়ে সাজানো ঝাঁচকচকে হাউসিং কমপ্লেক্স। ফেন্সি রেলিঙের ধারে ধারে কৃত্রিম মোমবাতি... মাটির প্রদীপ ছেড়ে অনেক পতঙ্গের ভীড় ঝুলন্ত বারান্দায়। ঝাঁচকচকে টাইলসের রঙ্গমঞ্চে রঙ্গোলীর রঙ্ধনু।নতুন পোশাক পরিহিত সকলে। ছাদে তুবড়ি,টু-সাউন্ড,ফুলঝুরি আরও দামী দামী বাজি। কমপ্লেক্সের ঠিক পাশেই আটপৌরে বস্তি। রেসনের কেরসিনে কয়েকটি মাটির প্রদীপ সংগ্রাম করছে অস্তিত্ব রক্ষার। হাসিমুখে সলতেরা পুড়ছে আলোর সাথে গল্প করবে বলে।

প্রতিদিনই প্রোমোটারের তরফ থেকে হুমকী আসে।আজ উৎসবের দিনও তার ব্যতিক্রম নয়।হাত কাটা কাল্টু তোলাও আদায় করে নিয়ে যায় প্রতিনিয়ত।এরকমই একটা ঝুপড়িতে বাস পদ্মা ক্ষেপীর। আগে পাশের বস্তিতে থাকতো। অ্যাডভারটাইসিং হোর্ডিং ছিঁড়ে বানানো ঝুপড়ি ।ঝুপড়ির ছাদে সুন্দরী মডেলের ছবি। ঠিক তার চোখের নীচের থেকে জল পড়ে,বর্ষাকালে। বেশ কয়েক দিন হল পদ্মা চিৎকার করে -"হাউই আসবে, হাউই আসবে"এ রকম পাগলী কত কি বলে!

রাত বারোটা প্রায়। ঘড়ির কাঁটা, মাটির প্রদীপ তখন ক্লান্ত। বাচ্চাদের আনন্দোল্লাস স্তিমিত। শান্ত পরিবেশের সাথে ফিসফাস করে গল্প করছে বাইপাস থেকে ভেসে আসা লরির হর্ণ। আগুনের গোলা হয়ে উড়ে আসে হাউই বাজি।নিঃশব্দে জ্বলতে থাকে স্বপ্ন গুলো। একের পর এক ঝুপড়ি পরিণত হতে থাকে আশা স্বপ্নের ধ্বংসস্তুপে। অনেক অনেক দূরে, আকাশে তখনও দামী বাজির আলোক ঝর্ণা। ত্রিপল, চাদর,কাগজ,প্লাস্টিক,চামড়া পোড়ার গন্ধ, দমকলের জলের সোঁদা মাটির গন্ধ, মিশে যায় বারুদ ও স্বপ্ন পোড়ার গন্ধে। আনন্দ ও বিষাদের সীমারেখার 'নো ম্যানস ল্যান্ড'-এ হাউই তখন প্রস্তুত হয় পরবর্তী উৎক্ষেপনের জন্য,আগামী বছর,পাশের বস্তির উদ্দেশ্যে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন