গ্যাস
দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়
“আপ রুচি খানা”- বললে মানুষের রুচি পার্থক্যের
যত বড় পরিচয়ই পাওয়া যাক না কেন,একটি খাদ্যে কোন মানুষেরই যে অরুচি নেই,সে কথা নিশ্চিতভাবে
বলা যায় তা হল গ্যাস।
অবশ্য
গ্যাসকে খাদ্য বলা যায় কিনা তা নিয়ে প্রথমেই তর্ক উঠতেই পারে।কারণ জল যদি
খাদ্য না হয়ে হয় পানীয়,তাহলে গ্যাস অবশ্যই
সেবনীয়।
পৃথিবীতে সবাই যে সব কিছু খাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই।অ্যালার্জিগ্রস্ত
চিংড়ি
খাবেন না,অম্বুলে ঘি খাবেন না-কিন্তু অতি
রাশভারী ব্যক্তিও যদি বলেন,তিনি কিছুতেই গ্যাস খাবেন না, তাহলে মাপ করবেন,আমি বলতে বাধ্য যে তিনি
সত্যবাদী নন।
শুদ্ধ ভাষায় যাকে বলা হয় তৈল,চলতি ভাষায় তাই গ্যাস।আবার যখন গ্যাস আভিধানিক
অর্থে বাস্পীয় পদার্থ,তখন তার আধার গ্যাস
সিলিন্ডার।নানা জায়গায় নানা কাজের জন্য গ্যাস মেলে
নানারকম।কার্যকারিতায় একটির সঙ্গে অপরটির মিল
কদাচিৎ।তাই ম্যানহোলের গ্যাসে যেখানে
মানুষের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি সুনিশ্চিত সেখানে ম্যান অর্থাৎ
মানুষের মুখের কথার গ্যাসে পরিতুষ্ট উপরঅলার প্রসাদে গ্যাসদাতার ডবল প্রোমোশনপ্রাপ্তিও কিছুই বিচিত্র
নয়।
তেল দেওয়া কথাটার মধ্যে কোথাও যেন একটা ইনফিরিয়রটি কমপ্লেক্স লুকিয়ে
আছে,তেল
যিনি দেন,তিনি যে তেলপ্রাপক উত্তমর্ণের কাছে সর্বদা অতি সঙ্কুচিত অধমর্ণ তাতে কোনও
ভুল নেই।কিন্তু গ্যাস দেন যিনি তিনি চাটুকারিতায় অনেক দক্ষ শিল্পী।ঘন ঘন হাত না
কচলেও তাকে সন্তুষ্ট করে কাজ উদ্ধার করতে পারেন,তাতে মান বাঁচে,কাজও হয়।
গ্যাস ও তেলের পরিণামফল একই।হয়তো সেই কথা ভেবেই সদাশয় ভারত সরকার
“অয়েল
এন্ড ন্যাচারাল গ্যাস কমিশন” নামক কমিশনটি স্থাপন করতে গিয়ে তেল ও গ্যাসকে এক
সারিতে ফেলেছেন।
গ্যাস খাওয়া যিনি আদৌ পছন্দ করেন না বলে অধস্তনদের সর্বদা সাবধান করে
দেন,তিন গ্যাসে বিগলিত
হবেনই,যদি তাঁকে বলা যায় “তেল দেওয়াকে আপনি যে মনে প্রাণে ঘৃণা করেন তা কি আমি জানিনা
স্যার?”
নির্বোধকে যদি বলেন ইন্টলিজেন্ট,বদরাগীকে অমায়িক-কিম্বা গণ্ডমূর্খ উপরঅলার
নেক নজরে আসার জন্য যদি তর্কে হার স্বীকার করে বলেন
“আশ্চর্য আপনার কাছে কতো শিখবার আছে।’’অথবা সুন্দরী পি.এ যদি তার বৃদ্ধ লোলচর্ম
বসকে বলেন-“আপনার মতো ইয়ং অ্যান্ড স্পিরিটেড মানুষ ছাড়া কার কাছে আর আর্জি পেশ করব
বলুন”-তাহলে অচিরেই গ্যাস খাবেন না,এমন বুদ্ধিমান কোথাও নেই।পাগলই বলুন, এম.এল.এ ই বলুন আর সব ব্যাপারে
তাঁরা যতই অবুঝ হোন,গ্যাসের বেলায় অন্তত কখনোই নয়।
শুধু
যে উত্তমর্ণকেই গ্যাস দিয়ে সন্তুষ্ট রাখেন তা ন্য।অনেক সময় এর উলটপুরানও দেখা
যায়।যখন টাকার অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজনে
পাওনাদারকে ছুটতে হয় দেনাদারের আস্তানায়।বেশী চোখ গরম করলে
পাছে দেনাদার বলে বসেন “যান মামলা করে টাকা আদায় করুন” সেই আশঙ্কায় চশমখোর পাওনাদারের কণ্ঠে বৈষ্ণব বিনয় ছোঁয়াচ
লাগে-দেনাদারকে দেখে গা রি রি করে উঠলেও বিগলিত বদনে তিনি
ককিয়ে ওঠেন;“জানি আপনার মতো সজ্জন ব্যক্তি কক্ষনো কথার খেলাপ করতে পারেন না।’’
সদা সর্বদা গ্যাস-এ যারা কারবার চালান তারা যেমন জগতের সেরা ব্যবসায়ী,তেমনি
কর্মক্ষেত্রে তারাই সফলতম পুরুষ,যারা গ্যাসে মন
ভেজাতে তৎপর।সরকারী অফিস থেকে সম্পাদকের দপ্তর পর্যন্ত যেখানে আপনি সহজে
কাজ উদ্ধার করতে চান না কেন,গ্যাস বিনা আপনার গতি নেই।গ্যাস খেলে সকলেই যে তুষ্ট হন
সে কথা চন্দ্র ,সূর্য ওঠার মতোই সত্য।কিন্তু মজা এই যে গ্যাসপ্রিয় ব্যক্তিরা কখনই তা স্বীকার করেন
না।গ্যাসদাতাদের পক্ষে সেতা কিন্তু কম বাঁচোয়া নইয়।কেননা,গ্যাসপ্রিয়র সেই অজ্ঞতার ফাঁকেই তো তারা গ্যাস দিয়ে
কার্য উদ্ধার করে থাকেন।
দিন।সরকার
আজকাল গ্যাস ব্যবহারের মাত্রা বেঁধে দিয়েছেন-এ কথা স্মরণে রাখবেন।বেশি গ্যাস খাইয়ে অপরের
স্বভাব ও স্বাস্থ্যহানির কারণ হবেন না প্লিজ।
bastob bishoybostu....uposthapona darun
উত্তরমুছুন